ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত 20 জনের মধ্যে 1 জন প্রাণঘাতী। এভাবে প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষ মারা যায়। তবে জ্বর তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে, ডেঙ্গু হোক বা না হোক, সময়মতো চিকিৎসা নিলে এর তীব্রতা অনেকটাই কমানো যায়।
এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে বোঝা যায় ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কি না, ডেঙ্গু হলে কীভাবে রোগীর যত্ন নিতে হবে এবং কোনো লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ
ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলেও তা সাধারণত গুরুতর হয় না।
কখন উপসর্গ দেখা দেয়?
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সাধারণত মশার কামড়ের 3-14 দিন (গড় 4-7 দিন) পরে দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে, সাধারণ সর্দি বা পেট খারাপের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় হঠাৎ কাঁপুনি সহ জ্বর আসতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা প্রায় 104 ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছাতে পারে। আবার তাপমাত্রা তেমন বেশি না হলেও শরীর গরম লাগতে পারে বা শরীর কাঁপতে পারে।
সাধারণ উপসর্গ কি?
ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে
- উচ্চ জ্বর (104 ডিগ্রি ফারেনহাইট বা 40 ডিগ্রি সেলসিয়াস)
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পিছনে ব্যথা
- পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- বমি
- শরীরের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, বগল, কুঁচকি বা গলা ফুলে যাওয়ার অনুভূতি
- শরীরে লাল ফুসকুড়ি বা ফুসকুড়ি
অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-
- খাবারের প্রতি ঘৃণা
- পেট ব্যাথা
ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে প্রায়ই প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথা হয়, তাই একে প্রায়ই ‘ভাঙা হাড়ের জ্বর’ বলা হয়।
ডেঙ্গু জ্বর কতদিন স্থায়ী হয়?
ডেঙ্গুর লক্ষণ সাধারণত 2-7 দিন স্থায়ী হয়। বেশিরভাগ লোক 1 সপ্তাহ পরে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। পুনরুদ্ধারের সময় 2-3 দিনের জন্য ফুসকুড়ি এবং ত্বক পুনরায় প্রদর্শিত হতে পারে। উপসর্গগুলি পরিষ্কার হওয়ার পরে কেউ কেউ কয়েক সপ্তাহ ক্লান্ত এবং অসুস্থ বোধ করতে পারে।
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো কী কী?
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হল জ্বর। এই ক্ষেত্রে, শরীরের তাপমাত্রা প্রায় 102-104 ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে অনেক সময় শিশুদের জ্বর নাও হতে পারে। জ্বর ছাড়াও অন্যান্য যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো-
- শরীরের শক্তি হ্রাস বা দুর্বলতা
- ঘুম ঘুম
- খিটখিটে হওয়া বা চিৎকার করা বা একটু কান্না করা
- শরীরে লাল ফুসকুড়ি
- মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া
- লাল ফুসকুড়ি বা ফুসকুড়ি যা ত্বকের নিচে রক্তপাত হয়
- 24 ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে 3 বার বমি হওয়া
- পানিশূন্যতা দেখা দেয়
কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?
শিশুদের ডেঙ্গু খুব দ্রুত প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। অতএব, বিশেষ করে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গুর গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত:
- পেটের তীব্র ব্যথা: বিশেষ করে ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে শুরু হওয়া এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকা ব্যথা।
- ঘন ঘন বমি বা রক্তবমি: যদি দিনে তিনবারের বেশি বমি হয় বা বমির সাথে রক্ত দেখা যায়, তাহলে তা গুরুতর হতে পারে।
- নাক, মুখ বা মাড়ি থেকে রক্তপাত: শরীরে রক্তপাতের সমস্যা হতে পারে যা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের লক্ষণ।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া: মাথা ঘোরা, মাথা ধরা, বা আচমকা দুর্বলতা অনুভব করা রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- চামড়ার নিচে রক্ত জমা: ত্বকে লালচে দাগ দেখা দিলে বা নীলচে ভাব থাকলে সেটি বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হলে সেটিও গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: একদম চলাফেরা করতে না পারার মতো দুর্বলতা অনুভূত হলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
ঘরোয়া চিকিৎসা
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া চিকিৎসা সহায়ক হতে পারে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। ঘরোয়া চিকিৎসা কেবল ডেঙ্গুর হালকা লক্ষণগুলোর উপশমে কার্যকর এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। ডেঙ্গুর ঘরোয়া চিকিৎসা করার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম
ডেঙ্গুতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে শরীর দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য পায় এবং শক্তি ফিরে আসে।
২. প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণ
ডেঙ্গুতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, তাই দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পান করা উচিত। এটি শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৩. পেঁপে পাতার রস
পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে। এটি খেলে প্লাটিলেট সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
ডেঙ্গুর সময় হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়া ভালো। এগুলো শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. তুলসী পাতা ও আদা চা
তুলসী পাতা ও আদা দিয়ে চা বানিয়ে পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বাড়ায়। দিনে দুই-তিন বার এটি খাওয়া যেতে পারে।
৬. গিলয় (গুড়ুচ) ব্যবহার
গিলয়ের রস বা চা ডেঙ্গুর সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভাইরাসের প্রভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৭. তাজা ফলের রস
আনারস, মালটা, পেয়ারা, তরমুজের মতো ফলের রস শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন সি-এর মতো প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
সতর্কতা: ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখে নিজে নিজে চিকিৎসা না করাই ভালো। ডেঙ্গু রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে বা উপরের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
অন্যান্য পোস্ট আরো পড়ুন